বয়সের সঙ্গে
সঙ্গে ছোটদের শরীর ও মনের পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তনের মাত্রাটা বৃদ্ধি পায় বয়ঃসন্ধির
সময়ে। এই সময়ে ছেলেমেয়েদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও
চিন্তাশক্তির বিকাশ মোটামুটি পরিণতি লাভ করে। ছেলেদের ক্ষেত্রে দেহ দ্রুত গতিতে বড়
হয়; গলার স্বর ভারি হয়, মুখে
দাড়ি-গোঁফ ওঠে, শরীরের নানা জায়গায় বিশেষকরে বগলে ও যৌন
অঞ্চলে লোম গজায়। এগুলি সাধারণতঃ ঘটে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তবে ঠিক কখন এই
পরিবর্তন শুরু হবে, সেটা নির্ভর করে শরীর যখন এর জন্য
প্রস্তুত হয়েছে তার ওপর। সেই প্রস্তুতিটা এক জনের ক্ষেত্রে এক এক সময় হয়।
বয়ঃসন্ধির এই অংশটিকে ইংরেজিতে পিউবার্টি (puberty) বলা
হয়। এর পরের অংশটি অর্থাত্ সাবালকত্ব পোঁছনোর আগে পর্যন্ত সময়টিকে বলা হয় অzাডোলেসেন্স (adolescenceএ)। এই সময়টাতে মানসিক,
সামাজিক ও চিন্তাশক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
ছেলেরা
বয়ঃসন্ধিকালে দ্রুত গতিতে লম্বা হয়। 'growth spurt' বা 'ঝটিতি বৃদ্ধি'র সময়ে বছরে ৪ ইঞ্চির বেশি লম্বাও কেউ কেউ হয়। বয়সন্ধি শেষ হতে হতেই
ছেলেরা মোটামুটি তাদের পরিণত উচ্চতায় পৌঁছে যায়। সাধারণভাবে পুরুষরা নারীদের থেকে
লম্বা হলেও বয়ঃসন্ধির প্রথম দিকে মেয়েরা অনেক সময়ে ছেলেদের থেকে বেশি লম্বা থাকে।
এর জন্যে ঐ বয়সে কারো কারো দুশ্চিন্তা হতে পারে যে সে বোধহয় চিরদিনই বেঁটে থেকে
যাবে। এই সময়টাতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের লম্বা হবার কারণ মেয়েদের বয়ঃসন্ধি আসে
ছেলেদের আগে - ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে। ফলে মেয়েরা আগে
থেকে দ্রুত লম্বা হতে শুরু করে।
পুরুষ মাত্রই
নারীর থেকে বেশি লম্বা হয় না। খেয়াল করলে অনেক লম্বা মেয়েই চোখে পড়বে। কে কতটা
লম্বা হবে সেটার পেছনে পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া, শরীরের সক্রিয়তা এবং তাদের বাবা-মা বা পূর্বপুরুষরা
কতটা লম্বা তার ওপরে। ফিনল্যাণ্ডের লোকেরা অনেক বেশি লম্বা হয় বাঙালীদের থেকে।
বাঙালীদের মধ্যেও লম্বার অনেক তারতম্য দেখা যায়। সাধারণভাবে বাবা মা লম্বা হলে
ছেলেমেয়েদের লম্বা হবার সম্ভাবনা বেশি হয়। তবে লম্বা বা বেঁটে হওয়ার মধ্যে ভবিষ্যত্
জীবনে সাফল্যের বিশেষ কোনও যোগ নেই। প্রতিভা, প্রচেষ্টা,
যোগাযোগ, ইত্যাদি অনেক কিছুর উপর নির্ভর
করে ভবিষ্যতে কে কি হবে। নেপোলিয়ান বেঁটে ছিলেন, কিন্তু
তারজন্য তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাধ্যক্ষ হওয়াতে আটকায় নি।
বয়সন্ধির
সময়ে ছেলেদের দেহ বলিষ্ঠ ও দেহের পেশী সুগঠিত হয়। কেউ কেউ আবার ক্ষিণদেহই রয়ে যায়।
এই তফাত্গুলোও স্বাভাবিক। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে যেটা করা উচিত, সেটা হল সক্রিয় জীবন যাপন, নিয়মিত ব্যযাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
এই সময়ে মনেরও একটা প্রচণ্ড পরিবর্তন আসে। এক একটি মেয়েকে দেখে হঠাত্ ভীষণ ভালো লেগে যেতে পারে। তার কথা সব সময়ে মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে, রাত্রে ঘুমোতে গেলে তার মুখটাই বার বার চোখে আসে, তার চিন্তাতেই মন আচ্ছন্ন থাকে। একে বলা হয় ক্রাশ (crush)। লজ্জা ও ভয় অতিক্রম করে তার সঙ্গে সহজ ভাবে মেশার ক্ষমতা না থাকলে মানসিক কষ্টও খুব হতে পারে। যেসব ছেলেদের সহজে মেয়েদের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা আছে, তাদের দেখে মনে হয়, আমি কেন পারি না, আমার সমস্যাটা কি?
প্রত্যেক
ছেলেদের পছন্দ অপছন্দ আলাদা। কারোর আবার ছেলেদেরই বেশি ভালো লাগে মেয়েদের থেকে। এক
সময়ে সেটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করা হত। এখনও সমাজে অনেকে সেটা মনে করেন। তবে ধীরে
ধীরে সেই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটছে। প্রত্যেকের পছন্দ অপছন্দকে - যদি সেটা অন্যের
ক্ষতিকারক না হয় - তাকে মর্যাদা দিতে আপত্তি কোথায় সে নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
ছেলেদের
শরীরে হর্মোন বয়ঃসন্ধির সময়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে; ফলে মনের অনুভূতিগুলো তীব্রতর হয়। এই
সময়ে মুড সুইং অনেকেরই হয় - একদিন আনন্দে উচ্ছ্বল, আরেকদিন
একদিন মনমরা ভাব। সেটা সামাল দিতে অনেকের অসুবিধা হয়। এই সময়ে নিজেকে না চেপে রেখে
বড়দের সঙ্গে কথা বললে, বা তাঁদের পরামর্শ নিলে, নিজেকে ঠিকপথে রাখতে সুবিধা হয়।
বয়ঃসন্ধি
কালে দাড়ি আর গোঁফ গজাতে শুরু করে। বুকে ও বগলেও লোম গজায়; যৌনাঙ্গের চারিদিকে বস্তি প্রদেশে ঘন
লোম দেখা দেয়। এটা স্বাভাবিক। এগুলো সব ঘটে টেস্টোস্টেরোন বলে একটি হর্মোনের
প্রভাবে। পিটিউটারি গ্ল্যাণ্ডে প্রস্তুত এই হর্মোন শরীরের বিভিন্ন স্থানকে
প্রভাবিত করে এই পরিবর্তন ঘটায়।
এই সময়ে ছেলেরা একটু বেশি ঘামে - হর্মোনের সক্রিয়তা তার একটা কারণ। ঘামের মধ্যে অতটা গন্ধ নেই - কারণ সেটা মূলতঃ জল, সেইসঙ্গে কিছুটা অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, লবন ও শর্করা। কিন্তু ঘামের জল দেহের চামড়ায় অবস্থিত ব্যাক্টিরিয়ার সংস্পর্শে এসে অপ্রীতিকর গন্ধ সৃষ্টি করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই গন্ধ বেশি হয়। তার জন্য লজ্জা বা অস্বোয়াস্তিতে অনেকে ভোগে। এটি কমাতে হলে নিয়মিত ভালো করে সাবান মেখে স্নান করা দরকার। গ্রীäমকালে গরমে বগলের গন্ধ কমানোর জন্য অনেকে ডিওডোরেণ্ট ব্যবহার করে। এগুলি খুব সস্তা নয়। সুতরাং নিয়মিত ভালোভাবে স্নানকরে নিজেকে যথাসম্ভাব পরিচ্ছন্ন রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই সময়ে ছেলেরা একটু বেশি ঘামে - হর্মোনের সক্রিয়তা তার একটা কারণ। ঘামের মধ্যে অতটা গন্ধ নেই - কারণ সেটা মূলতঃ জল, সেইসঙ্গে কিছুটা অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, লবন ও শর্করা। কিন্তু ঘামের জল দেহের চামড়ায় অবস্থিত ব্যাক্টিরিয়ার সংস্পর্শে এসে অপ্রীতিকর গন্ধ সৃষ্টি করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই গন্ধ বেশি হয়। তার জন্য লজ্জা বা অস্বোয়াস্তিতে অনেকে ভোগে। এটি কমাতে হলে নিয়মিত ভালো করে সাবান মেখে স্নান করা দরকার। গ্রীäমকালে গরমে বগলের গন্ধ কমানোর জন্য অনেকে ডিওডোরেণ্ট ব্যবহার করে। এগুলি খুব সস্তা নয়। সুতরাং নিয়মিত ভালোভাবে স্নানকরে নিজেকে যথাসম্ভাব পরিচ্ছন্ন রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরেকটি
পরিবর্তন ঘটে সেটি যৌন সংক্রান্ত। এই সময়ে যৌনাঙ্গ বড় হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি
পেয়ে মাঝে মাঝে ছেলেদের যৌনাঙ্গ শক্ত হয়ে উত্থিত হয়। এটা স্বাভাবিক এবং নানা কারণে
দিনে বা রাতে এটা ঘটতে পারে। অনেক সময়ে ঘুম থেকে কেউ খেয়াল করে যে বিছানাটা ভিজে
ভিজে। একে স্বপ্নদোষ আখ্যা দেওয়া হলেও এতে দোষের কিছু নেই। ঘুমন্ত অবস্থায় এই
রেতঃপাত বা বীর্যস্খলন কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, এটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে এবং
বয়ঃসন্ধির একটি লক্ষণ। তবে যদি যৌনাঙ্গে কোনও ব্যথা বা যৌনাঙ্গের নিচে অণ্ডকোষে ব্যথা
হয়, তাহলে ডাক্তারকে সেটা জানানো দরকার। লজ্জাবশতঃ এই
ব্যাপারটা ঢেকে রাখা বা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
No comments:
Post a Comment